৫ই মে শাপলা চত্বরে গনহত্যা

২০১৩ সালের ৫ মে, মধ্যরাতে মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থান করা হেফাজতে ইসলামের অবরোধ পরবর্তী সমাবেশে ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর বর্বর গণহত্যা চালায় র‌্যাব, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী। যৌথবাহিনীর ‘অপারেশন ফ্লাশ আউট’ বা ‘অপারেশন শাপলা’ নামক গণহত্যায় নিহতের সংখ্যা কত তা এখনো অজানা। হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের দুই হাজারের বেশি মুসল্লি শাহাদাতবরণ করেছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ৬ মে ভোরে যৌথবাহিনীর অভিযানে কোনো মুসল্লি মারা যায়নি। পুলিশের দাবি, হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে ১১ জন নিহত হয়েছে। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেছেন, ঘুমন্ত ও ইবাদতরত মুসল্লিদের ওপর গুলি চালিয়ে ওই রাতে গণহত্যা চালানো হয়। এছাড়া অন্তত ১০ হাজার লোক আহত এবং বহু লোক এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। শুধু হেফাজত নেতারাই এই দাবি করেনি, দেশ-বিদেশের একাধিক মানবাধিকার সংগঠন এবং গণমাধ্যমও প্রায় একই দাবি করেছে। হংকং ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন জানিয়েছে, শাপলা চত্বরে নিহতের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি হতে পারে।

বাংলাদেশের খ্যাতনামা মানবাধিকার সংগঠন “অধিকার” বলেছে, শাপলা চত্বরে ৬১ জন হেফাজত কর্মীকে হত্যা করা হয়। এরপর ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে করে লাশ সরিয়ে ফেলা হয়। বার্তা সংস্থা এপির বরাত দিয়ে মার্কিন টিভি স্টেশন সিএনএন জানায়, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা হয়তো কখনোই জানা যাবে না। প্রভাবশালী বৃটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট ৫ ও ৬ মে’র হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা বলেই মনে হচ্ছে বলে তাদের প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছে। পরে নিহত বেশ কিছু হেফাজত কর্মীর লাশ অজ্ঞাত হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন রাজধানীর জুরাইনের স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা জানিয়েছেন, সাভারের রানা প্লাজার অজ্ঞাত লাশ বলে ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে ৭ মে সকাল-সন্ধ্যায় ও ৮ মে ভোরে কিছু লাশ দাফন করা হয়েছে। এর প্রকৃত সংখ্যা কত, সেটা কেউ বলতে পারেননি। কিন্তু জুরাইন, ফরিদাবাদ এলাকার মানুষের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে সাভারে বিধ্বস্ত রানা প্লাজা থেকে উদ্ধার করা অজ্ঞাত লাশের ছদ্মাবরণে মতিঝিল গণহত্যার বেশকিছু লাশ দাফন করা হয়েছে।

সেদিন ভোরের দৃশ্য বিভিন্ন মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মতিঝিলের আলিকো ভবনের সামনে টুপি-দাড়িওয়ালাদের বন্দুক দিয়ে পেটায় পুলিশ। একই সঙ্গে রাজপথে সাদা পাঞ্জাবি পরা বহু মানুষের রক্তাক্ত লাশ পড়ে ছিল। গুলিবিদ্ধ অনেককে মাটিতে ঢলে পড়তে দেখা যায়। অনেকের শরীর রক্তাক্ত। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অ্যাম্বুলেন্সে লাশ তুলতে দেখা যাচ্ছে। লাশ তোলা হচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবাহী গাড়িতে। সরকারের পক্ষ থেকেও এ সব রিপোর্টের কোনো প্রতিবাদ জানানো হয়নি।


এ ঘটনাকে ধামা চাপা দেয়ার জন্য প্রতিপক্ষ হিসাবে চিহ্নিত করে সরকার দেশের দুইটি জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভি সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় ৬ মে-র ভোর রাত থেকে। টেলিভিশন বন্ধ হয়ে গেলেও ফেসবুকসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ওই রাতের হত্যার বিভিন্ন ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সে রাতের গণহত্যার ঘটনা আর ধামা চাপা দিতে সক্ষম হয়নি সরকার।

 

 

৫মে গনহত্যাশাপলা চত্বরহেফাজতে ইসলামী