আওয়ামী চাঁঁদাবাজির মহোৎসব
বেপরোয়া চাঁদাবাজদের কবলে রাজধানীসহ সারাদেশ। হাট-ঘাট, ফুটপাথ, শহর-বন্দর কিংবা গ্রামগঞ্জ সর্বত্রই ক্ষমতাসীন দল আশ্রিত মাস্তানদের নামে চাঁদাবাজি চলে। নিয়ন্ত্রণও করেন সরকারি দলের মন্ত্রী ও এমপিরা। খোদ নৌপরিবহন মন্ত্রীই চাঁদাবাজদের গডফাদারে পরিণত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিনিয়ত চাঁদা দিতে হয় সড়কে, বাসে, লঞ্চে, রেল স্টেশনেও। প্রতিটি বাস ও লঞ্চটার্মিনাল চাঁদাবাজদের কাছে যেন সোনার খনিতে পরিণত হয় এ সময়। প্রত্যেকটি সড়কে রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নামে প্রকাশ্যেই চলে চাঁদা আদায়। বাস, ট্রাক, টেম্পো, রিকশা, অটোরিকশা, প্রাইভেট গাড়ি যে কোন বাহনের চালক ও মালিকদেরই প্রতি ট্রিপেই পয়েন্টে পয়েন্টে মাস্তানদের চাঁদা দিতে হয়। দিন কিংবা মাস হিসেবে চাঁদা দিতে হয়েছে সবাইকে। চাঁদা না পেলেই হামলা, মামলা, হুমকি এমনকি খুন জখম হতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। চাঁদাবাজদের হাত থেকে কেউই রেহাই পায় না। কখনো বড় ভাইয়ের নামে, কখনো নেতার নামে, কখনো পুলিশের নামে, কখনো বিভিন্ন সংগঠন বা অনুষ্ঠানের নামে চাঁদাবাজি চলে। পলাতক ও আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে চাঁদাবাজি চলে বড় শহর কিংবা বন্দরে। চাঁদা না দিলেই লাশ হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কিংবা তার পরিবারের লোকজনকে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে ‘হয় চাঁদা না হয় মৃত্যু।’ চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় প্রাণহানিও হয়েছে বহু মানুষের। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে চাঁদাবাজির কারণে দেশের মানুষ চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কে দিন পার করছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হচ্ছে মোবাইল ফোনে। সন্ত্রাসীরা অদৃশ্যে থেকেই ভয়ভীতি দেখিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে চাঁদাবাজি করে। এই চাঁদাবাজি থেকে বাদ যায়নি খোদ পুলিশবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। চাঁদা চেয়ে হুমকি হিসেবে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য পাঠানো হয়েছে কাফনের কাপড়, ককটেল ও হাত বোমা। সন্ত্রাসীরা চাঁদা দাবিকৃত ব্যক্তি কিংবা তার সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের চলাফেরার পথ অনুসরণ করে ফোনে তা জানিয়ে গুলি করার হুমকি দেয় বিভিন্ন সময়। শীর্ষ সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি করে কারাগারে বসেই। চাঁদাবাজিতে পিছিয়ে থাকেনি পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশের দুর্বৃত্ত সদস্যরাও।
ক্ষুদ্র আওয়ামী নেতা-কর্মীরাই নয়, বরং এই দুর্র্নীতির সাথে খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরাও জড়িত। গত ৬ এপ্রিল ২০১৩ এক ব্যবসায়ীকে আটক করে ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে এক কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) মোল্লা নজরুল ইসলাম। সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন তার টিমের আরেকজন সদস্য এসআই হাসনাত। চাঞ্চল্যকর এমন অভিযোগ করেন নড়াইল থেকে নির্বাচিত সরকারি দলের সংসদ সদস্য কবিরুল হক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সঙ্গে দেখা করে তিনি এ অভিযোগ দেন। তিনি লিখিত অভিযোগের সঙ্গে চাঁদা গ্রহণের প্রমাণস্বরূপ ভিডিও ফুটেজ, অডিও রেকর্ড ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দেন। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আবিদুল ইসলামও ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে পুলিশ বাহিনীর একটি বিশেষ ব্যাটালিয়নের কাছে অভিযোগপত্র জমা দেন।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.