আওয়ামী কর্তৃক নিরীহদের হত্যা
আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নিরীহ শিশুকেও প্রাণ দিতে হয়েছে তাদের হাতে। এ সকল ঘটনার বিশেষ কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরা হল :
ঢাবি ছাত্র আবু বকর হত্যাকাণ্ড
ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত সাধারণ ছাত্র আবু বকর ছিদ্দিক নিহত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলে রোববার দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে দুই গ্রুপের ২০-২৫ জন কর্মী আহত হয়। কিছু সাধারণ ছাত্রও ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন। আহত সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে আবু বকরের অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টায় তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। বুধবার ভোর ৪টায় তার অবস্থার অবনতি ঘটে, সকাল ৯টা ২৩ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর করেছে প্রক্টর অফিস ও তিনটি গাড়ি। বিক্ষোভ ঠেকাতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। আবু বকরের মৃত্যুতে ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে আসে। কান্নায় ভেঙে পড়েন সহপাঠী ও বন্ধুরা।
বিশ্বজিত হত্যাকাণ্ড
০৯ ডিসেম্বর, ২০১৩। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের সরকারের দুঃশাসন, দ্রব্য-মূল্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে পূর্ব-নির্ধারিত মহাসড়ক অবরোধের দিন ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে, ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্টমিডিয়ার সামনে পুরান ঢাকা ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে চাপাতি, রামদা, রড দিয়ে কুপিয়ে, পিটিয়ে পৈশাচিক ভাবে হত্যা করে নিরীহ পথচারী দর্জি-দোকানি বিশ্বজিত দাসকে (২৪)। হত্যাকারী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের ছবি, ভিডিও বিশ্ববাসীকে হতবাক করলেও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশ বাহিনী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিহ্নিত সেই ছাত্রলীগ ক্যাডারদের রক্ষা করতে বিভিন্ন টালবাহানার আশ্রয় নিয়েছিল। এখানেই থেমে থাকেনি হত্যাকারীদের রক্ষার চাল; ফরেনসিক রিপোর্টে অদ্ভূত ধরনের দায়সারা রিপোর্ট প্রদান করে যাতে কোন ধরনের জঘন্য আঘাতের উল্লেখ করা হয়নি। জাতি দেখলো ছাত্রলীগের অব্যাহত নির্মমতা আর প্রশাসনের প্রহসনের রাজনীতি। পরবর্তীতে বেশির ভাগ মিডিয়া এবং দেশবাসীর প্রচণ্ড চাপে বিচারকার্য চালাতে বাধ্য হয় সরকার। চাঞ্চল্যকর হত্যার রায় গত ১৮ ডিসেম্বর ২০১৩ তে প্রকাশিত হয়েছে। এতে ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। উল্লেখ্য, দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। যদিও খুনিদেরকে অন্য দলের কর্মী হিসেবে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে ছিল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্যটি আর গোপন থাকল না।
নারায়ণগঞ্জে মেধাবী ছাত্র তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ড
আওয়ামী নোংরা এবং পাশবিক রাজনীতির আরেক উদাহরণ নারায়ণগঞ্জ গণজাগরণ মঞ্চের উদোক্তা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির ছেলে তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী (১৭) হত্যাকাণ্ড। আওয়ামী রাজনীতিবিদ এবং কথিত সুশীলরা এক্ষেত্রেও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে দুষতে দেরি করেনি; কিন্তু সত্য বেশিদিন অপ্রকাশিত থাকেনি। নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত শামীম ওসমান পরিবারের প্রত্যক্ষ মদদেই যে এই হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন হয়েছিল, ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীসহ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ এবং মিডিয়ার মাধ্যমেই তা প্রকাশিত হয়। হত্যার নেতৃত্বে ছিলেন জেলার-৫ আসনের সাংসদ জাতীয় পার্টির নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান। ৬ মার্চ ২০১৩ তারিখে নিখোঁজ হওয়ার পর ৮ মার্চ ২০১৩ তারিখে শীতলক্ষ্যা নদীতে ত্বকীর লাশ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের গোলাগুলিতে শিশু নিহত
আধিপত্য বিস্তার, পূর্বশত্রুতার জের এবং টেন্ডারবাজি ও নিয়োগ-বাণিজ্যের অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শামছুদ্দিন আল আজাদ এবং সাধারণ সম্পাদক রফিকুজ্জামান গ্রুপের মধ্যে দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় রাব্বি (১০) নামে একশিশু। সে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যা¤পাসের পাশের বয়ড়া গ্রামের দরিদ্র টেম্পোচালক দুলাল মিয়ার ছেলে।
চট্টগ্রামে টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের গোলাগুলিতে শিশুসহ নিহত ২
টেন্ডার নিয়ে কাটাকাটি, খুনাখুনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির একটি নিত্ত-নৈমিত্তিক ঘটনা। তবে তা থেকে রক্ষা পায়নি নিরীহ সাধারণ শিশুও। গত ২৪ জুন, ২০১৩ চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার সি আরবি এলাকায় সাতরাস্তার মোড়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৪৮ লাখ টাকার টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের গোলাগুলির সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে সাজু পালিত (২৮) নামে এক ব্যক্তি এবং মোঃ আরমান হোসেন (৮) নামে এক শিশু নিহত হয়। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও টেন্ডারকাজে ফোরস্টার খ্যাত হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সাইফুল আলম লিমন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে এ নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে। পুলিশ খুনিদের অনেককে গ্রেফতার করলেও পরে জামিনে বের হয়ে যায় বাবর আর লিমনরা।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.