Tears of Victim

সাধারণ শিক্ষকদের উপর আওয়ামী হামলা

1,918

গত পাঁচ বছরে আওয়ামী সরকারের নির্যাতন বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্য যেকোন সময়ের সরকারের নির্যাতনের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আওয়ামী সরকারের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি নিরীহ মানুষ, বিরোধী নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ। সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলীও আওয়ামী সরকার ও ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। শুধু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্বর হামলায়ই ৩০ জন শিক্ষক আহত হন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে অন্য কোন সরকারের সময় এতজন শিক্ষক নির্যাতনের শিকার হননি। এছাড়াও দেশের অনেক জায়গায় শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।

ইবি শিক্ষকদের ওপর হামলা
২০১২ সালের ১৯ নভেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, দলীয়করণ ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত অবাঞ্ছিত ভিসি প্রফেসর ড. আলাউদ্দীন, প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. কামাল উদ্দীন, ট্রেজারার প্রফেসর ড. শাজাহান আলীর পদত্যাগ দাবিতে সাধারণ শিক্ষকরা আন্দোলন করেন। শিক্ষক সমিতির এ চলমান আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে শতাধিক শিক্ষকের ওপর ছাত্রলীগ নামধারী বহিরাগত অস্ত্রধারী ক্যাডাররা অতর্কিত হামলা চালায়। এতে প্রায় ৩০ জন শিক্ষক আহত হন। সৃষ্টি হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। এ হামলায় অন্তত ৩০ জনের অধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী আহত হয়। কার ইন্ধনে এ হামলা হয়েছে, কারা হামলা চালিয়েছে তা সে সময়ের বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্র-পত্রিকায় ছবিসহ উপস্থাপন করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সারা দেশের শিক্ষকসমাজ সেই সকল সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানালেও আজ অবধি প্রশাসন তাদের গ্রেফতার করেনি, বরঞ্চ হামলাকারীরা প্রকাশ্যে ক্যাম্পাসে প্রশাসনের সামনে দাপটের সাথে ঘুরে বেড়িয়েছে।

জাবি শিক্ষকদের ওপর হামলা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও ‘সাধারণ শিক্ষক ফোরাম’ এর ব্যানারে বিভিন্ন মতাদর্শের চার শতাধিক শিক্ষক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগ দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। ৯ অক্টোবর ২০১৩, সালে ভিসি আনোয়ার হোসেনের উপস্থিতিতে এবং কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরের উপস্থিতিতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর চেয়ার ছুড়ে অতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। এতে আল-বেরুনী হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার খসরু পারভেজ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহেল কাফী এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের তানজিনুল হক মোল্লা (ইমন) শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। শিক্ষক সমিতি ও ‘সাধারণ শিক্ষক ফোরাম’ এর শিক্ষকবৃন্দ হামলাকারী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানালেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি।


বরিশালে বিএম কলেজে অধ্যক্ষের ওপর হামলা
২০১৩ সালের ১২ ফেব্র“য়ারি বরিশালে বিএম কলেজে নবাগত অধ্যক্ষ অধ্যাপক শঙ্কর চন্দ্র দত্ত যোগদান করতে আসলে তাকে মারধর করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কলেজ সংলগ্ন পেট্রোল পাম্প এলাকায় ছাত্রলীগ ক্যাডার মঈন তুষারের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ কর্মীরা অধ্যক্ষের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারী ছাত্রলীগ কর্মীরা বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র হিরণের অনুসারী ছিল। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলা থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য অধ্যক্ষ দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করলেও তারা তাকে ধাওয়া করে হামলা করে। অধ্যক্ষ শঙ্কর চন্দ্র দত্ত হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে আসলেও স্থানীয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি।

পাবনায় সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের অধ্যক্ষের ওপর হামলা
২০১০ সালের ২১ জুন পাবনায় সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আনোয়ারুল ইসলামের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ কর্মীরা। একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি কার্যক্রমে ছাত্রলীগ অন্যায় আবদার করলে অধ্যক্ষ তা মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং ছাত্রলীগকর্মীদের ভর্তি বাণিজ্যে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ছাত্রলীগের কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়। পরে অধ্যক্ষ বাসায় ফেরার পথে শহরের জুবলী পুকুরের পাড়ে ছাত্রলীগের নেতা ও কলেজের সাবেক ভিপি আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাঁর ওপর হামলা করে তাঁকে লাঞ্ছিত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরবর্তীতে কলেজের শিক্ষকমণ্ডলী এ ঘটনার জন্য দোষী ছাত্রলীগ কর্মীদের শাস্তির দাবিতে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। কিন্তু প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় অধ্যক্ষ বুলবুল কলেজ থেকে পদত্যাগ করে চাঁদপুরে একটি সরকারি কলেজে বদলি হয়ে চলে যান।

বুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর হামলা
অন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার চেষ্টা চালায় বুয়েট ছাত্রলীগ। ২০১২ সালের ২ সেপ্টেম্বর ৪০-৫০ জন ছাত্রলীগ কর্মী আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে। তারা আন্দোলনকারী শিক্ষকদের হাত থেকে মাইক কেড়ে নিয়ে তা ভেঙে ফেলে এবং শিক্ষকদের অবস্থানরত কক্ষের দরজাভাংচুরের চেষ্টা চালায়। শিক্ষকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে তারা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর জন্য তারা ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন শাখার বহিরাগত ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে নিয়ে আসে।

বাকৃবি-তে শিক্ষকদের ওপর হামলা
৮ আগস্ট ২০১১ সোমবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রামদা, রড ও লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা করে এবং তাদের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে ২০ শিক্ষক আহত হন। ইটের আঘাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস মারাত্মকভাবে আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাপাতালে ভর্তি করা হয়।

আন্দোলনরত প্রাইমারি শিক্ষকদের উপর হামলা
এ সরকারের শুরু থেকেই জাতি গড়ার কারিগর, প্রাইমারি শিক্ষকদের প্রতি বৈষম্য ক্রমশ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে শিক্ষকরা নেমে আসেন রাজপথে। আর তাদের এই যৌক্তিক দাবিকে উপেক্ষা করে কখনো শহীদ মিনারে কখনো প্রেসক্লাবের সামনে আবার কখনো জাতীয় সংসদের সামনে আন্দোলনরত প্রাইমারি শিক্ষকদের ওপর পুলিশের পিপার স্প্রে নিক্ষেপের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটে। ভয়ঙ্কর এই রাসায়নিক গ্যাসটি কেমিকেল উইপন কনভেনশন এর ১.৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যবহার নিষিদ্ধ। পিপারস্প্রের বিষক্রিয়ায় ১৫ জানুয়ারি ২০১৩ নিহত হন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের পটুয়াখালী জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো: সেকান্দার আলী। এ ছাড়া গরম পানি নিক্ষেপ, লাঠিচার্জসহ সকল প্রকার নির্যাতন চলে শিক্ষকদের ওপর।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.