আওয়ামী অনৈতিকতা
আওয়ামী শাসনের শুরু থেকেই তাদের অনৈতিক চরিত্রের চিত্রায়ণ হতে থাকে। গত পাঁচ বছরে মন্ত্রী থেকে শুরু করে যুবলীগ, ছাত্রলীগ সবাই এই ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল। নিরীহ ছাত্রীদের ওপর হামলা, ছাত্রীদের সম্ভ্রমহানি, ইভটিজিং, বিভিন্ন ছাত্রীহলে ঢুকে ছাত্রীদের হুমকি প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল ছাত্রলীগ যুবলীগের কর্মীরা। ক্ষমতার সর্বোচ্চ অপব্যবহার করে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বখাটে কর্মীরা। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের মতে, শুধুমাত্র ২০১২ সালেই সারাদেশে ধর্ষিত হয় ৮০৫ জন নারী ও শিশু। যার অধিকাংশের সাথেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে।
ছাত্রীদের ওপর হামলা
গত পাঁচ বছরে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা বিভিন্নভাবে ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন চালায়। তারা ছাত্রীদের হলে অবৈধভাবে প্রবেশ করে নিরীহ ছাত্রীদের ওপর হামলা চালায়। এতে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় হলে বসবাস করতে হয়েছে ছাত্রীদের। ২৫ মে ২০১৩, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ছাত্রলীগ কর্মী মাছুম ওরফে মুন রোজারিও-র আজীবন বহিষ্কার-এর দাবিতে পাঁচদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। আর ছাত্রীদের এই দাবিতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাব্বির আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ১০-১২ জন ছাত্রলীগ কর্মী তাদের ওপর হামলা চালায়। তারা এ সময় আন্দোলনরতদের কিল ঘুষি মারতে থাকে। তাদের এই হামলায় ৩ জন ছাত্রী গুরুতর আহত হন। ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফি কমানোর যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগ বর্বর হামলা চালায়। এই সময় ছাত্রীদের ওপরও হামলা চালায় ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। এতে বেশ কয়েকজন ছাত্রীসহ ৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। আওয়ামী মদদপুষ্ট প্রক্টরও ছাত্রীদের ওপর পরিচালিত হামলায় অংশ নেয়। উপস্থিত ছাত্রীদের চুল ধরে টানাটানি, কিল ঘুষিসহ বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। ২০১২ সালের ২ জুলাই শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার্থীরা ক্যা¤পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার দাবিতে মানববন্ধন করলে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এতে উপস্থিত কয়েকজন ছাত্রী ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে লাঞ্ছিত হন। এর আগে শেখ হাসিনার ৬৪তম জন্মদিনে ছাত্রলীগের আনন্দ মিছিলের সামনে ব্যানার ধরাধরি নিয়ে মারামারির ঘটনায় ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১০ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যা¤পাসে ইডেন কলেজ নেত্রী-কর্মীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীদের মারামারির ঘটনায় ২ জন আহত হয়। ২০১১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে ফুল দিতে না যাওয়ায় সাধারণ ছাত্রীদের বেধড়ক পেটায় বদরুন্নেসা কলেজ ছাত্রলীগের সভানেত্রী নাসরিন সুলতানা ঝরা। হলরুমে গিয়ে মেয়েদের লাঠি ও রড দিয়ে বেধড়ক পিটুনি দেয়। এতে অন্তত ২২ জন ছাত্রী গুরুতর আহত হন।
আহতদের সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে চাইলে তাতেও বাধা দেয় এ নেত্রী। ২৮ জানুয়ারি ২০১০ সালে ইডেন কলেজের ছাত্রীরা কলেজ ক্যান্টিনে খাবারের দাম কমানো এবং মান বৃদ্ধির দাবিতে অধ্যক্ষ বরাবর স্মারকলিপি দিতে গেলে ছাত্রলীগ ছাত্রীদের ওপর হামলা করে। এতে প্রায় আটজন সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হয়। এই ভাবে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের ওপর নগ্ন হামলা চালায়। আর প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা না নিয়ে বরঞ্চ এই ক্যাডারদের সহযোগিতা করে।নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে।
ছাত্রীদেরকে অনৈতিক কাজে ব্যবহার
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা-নেত্রীদের অনৈতিক স¤পর্কে জড়িত থাকা ও তাদের দিয়ে জোরপূর্বক দেহব্যবসার অভিযোগ ছিল গত পাঁচ বছরে আলোচিত ঘটনা। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা এবং কয়েকটি শাখা কমিটির নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ছাত্রী হল, ইডেন সরকারি মহিলা কলেজ, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। এছাড়া সংগঠনটির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও ঐ অবৈধ ব্যবসায় জড়িত ছিল। তাদের এই অনৈতিক কাজে কেউ রাজি না হলে তাকে জোরপূর্বক সেই কাজ করতে বাধ্য করা হয় অথবা হল থেকে বের করে দেয়ার ঘটনাও ঘটে। শুধু নেতাদের বাসায়ই নয়, বিভিন্ন শিল্পপতি ব্যবসায়ীদের বাসায়ও পাঠানো হতো নিরীহ ছাত্রীদের। এতে রাজি না হলেই তাদের ওপর নেমে আসত নির্যাতন। স্বয়ং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির বিরুদ্ধেই ইডেনে নেত্রীদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় ছাড়াও তার বাসায় নেত্রীদের যাতায়াতের অভিযোগ রয়েছে। ইডেন ও বদরুন্নেসায় নবাগত নেত্রীদের বিভিন্নভাবে ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব লুটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। মিছিলে ধরে আনা, ছাত্রীদের টার্গেট করে বিভিন্ন নেতার বাসায় পাঠানোর পাশাপাশি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে আসীন ব্যক্তিদের বাসায়ও পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবসা করেছে ছাত্রলীগ। বদরুন্নেসা কলেজেও ছাত্রলীগের নেত্রীরা ছাত্রীদের ধরে ধরে হোটেলে বা বাসায় পাঠিয়ে থাকেন। এতে কেউ রাজি না হলে তাকে হল থেকে বের করে দেয়াসহ মারপিট পর্যন্ত করা হয়। যার সাক্ষী গত পাঁচ বছরের বিভিন্ন সময়ের পত্রপত্রিকা।
আওয়ামী লাম্পট্য
গত ৫ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানে শতাধিক নারী ও ছাত্রী উত্ত্যক্ত, লাঞ্ছনা ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালে বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানে ও থার্টিফার্স্ট নাইটের অনুষ্ঠানে অন্তত ২০ নারী ও ছাত্রী লাঞ্ছিত হন ছাত্রলীগের হাতে। জাহাঙ্গীরনগরে ঘটেছে ছাত্রী উত্ত্যক্তের ঘটনা। বরিশাল বিএম কলেজের এক ছাত্রীর নগ্ন দৃশ্য এক ছাত্রলীগ কর্মী মোবাইলে ধারণ করায় ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে। ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল দিনে-দুপুরে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এক ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। ২০১০ সালের ২ অক্টোবর বরিশালের মুলাদীতে ছাত্রলীগ কর্মীরা ধর্ষণ করে দুই বোনকে। ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর রাজশাহী নগরীতে নারী নিয়ে ফুর্তি করার সময় স্থানীয় জনতার তোপের মুখে পড়ে দেয়াল টপকে পালিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ওয়ালি খান। ২০১১ সালের ১৭ মে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং জলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাকিবকে এক নারীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে স্থানীয় লোকজন।
ছাত্রীদের ইভটিজিংসহ নানাভাবে উত্ত্যক্তকরণ
ছাত্রীদের ইভটিজিং করা গত পাঁচ বছর ধরে ছাত্রলীগের ছিল নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। প্রতিদিনই খবরের কাগজ উল্টালে দেখা যেত দেশের কোন না কোন স্থানে ছাত্রলীগের হাতে ছাত্রীরা ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছে। ছাত্রলীগের এই নির্যাতনের হাত থেকে বাদ যায়নি দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার এমনকি বিবাহিত নারীরাও। ছাত্রলীগ নেতার ইভটিজিং-এর শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছিল ঝিনাইদহে কলেজছাত্রী মৌসুমী বিশ্বাস। ২০১০ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সের এক ছাত্রীকে ছাত্রলীগ কর্মীরা ইভটিজিং করে। আর এতে উপস্থিত সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করলে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের ওপরও নির্যাতন চালায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত ছাত্রীদের ইভটিজিং করে আসছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। ছাত্রলীগের এই অপকর্ম থেকে রেহাই পায়নি স্বয়ং মহিলা পুলিশ সদস্যরাও। রাজশাহীতে ছাত্রলীগ কর্মীরা দুই মহিলা পুলিশ সদস্যের মোবাইলে ছবি তোলে ও তাদেরকে উত্ত্যক্ত করে এবং তাদের উদ্দেশ্যে অশালীন মন্তব্য করে। চট্টগ্রামে জোবড়া গ্রামে গৃহবধূকে উত্ত্যক্ত করায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর হামলায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান নিহত হয়। ইভটিজিং-এর অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ কর্মীদের বহিষ্কার করে প্রশাসন।
২০ জানুয়ারি ২০১৩ রোববার দিবাগত গভীর রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে মেডিক্যাল কলেজের অবৈধ ছাত্রকর্মী পরিষদের ভিপি আবদুল্লাহ মারুফ ও প্রোভিপি আবদুল বাকিসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা মাতাল অবস্থায় প্রবেশ করে এবং ছাত্রীদের হুমকি দেয়। এর প্রতিবাদে পরের দিন সোমবার বেলা সাড়ে এগারটায় মেডিক্যাল কলেজ ক্যা¤পাসে ছাত্রীরা মানববন্ধন শেষে অধ্যক্ষের কাছে বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.