Tears of Victim

মিডিয়ার উপর সরকারের দমন-পীড়ন

1,629

এই পাঁচ বছরে গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরেছে মহাজোট সরকার। তাদের পুরো ৫ বছরেই গেছে সাংবাদিক নির্যাতন আর মিডিয়াদলনের মাধ্যমে। সংবাদপত্র দলনে জঘন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই সরকার। চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ হত্যার শিকার হয়েছেন ২০ সাংবাদিক। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশন, চ্যানেল ওয়ান, অনলাইন পত্রিকা শীর্ষ নিউজ ও শীর্ষ কাগজ। দীর্ঘদিন পর্যন্ত আটকে রাখা হয়েছিলো যমুনা টিভির অনুমোদন। দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে দুই দফায় গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে ৬৮টি সাজানো ও মিথ্যা মামলা। দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক প্রবীণ সাংবাদিক আবুল আসাদকেও গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে শীর্ষ কাগজ ও শীর্ষ নিউজ ডটকম সম্পাদক একরামুল হককে। তার বিরুদ্ধেও দেয়া হয় বেশ কয়েকটি সাজানো মামলা। এছাড়া ফেসবুক বন্ধ করা, সরকারের সমালোচনাকারী ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ করা কিংবা বিটিআরসির মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ সাংবাদিক নির্যাতন এবং মিডিয়াদলনের নয়া রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের ক্যাডার বাহিনীর হামলার শিকার হয়ে চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে বহু সাংবাদিককে। এছাড়া পত্রিকা বিলি করতে না দেয়া, পত্রিকায় অগ্নিসংযোগ, এজেন্টদের দোকানে অগ্নিসংযোগ, পত্রিকা ছিনিয়ে নেয়া, এজেন্ট ও হকারদের মারধরসহ মিডিয়াদলনে অসংখ্য নিকৃষ্ট নজির স্থাপন করেছে এই সরকার। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যরাও এক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল না। তারা সরকারি দলের নেতাদের খুশি করার জন্য নিজেরাই বাদি খুঁজে খুঁজে এনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে। মামলা করেছে মন্ত্রী-এমপিদের ক্যাডার বাহিনীও। সব মিলিয়ে এই পাঁচ বছর কঠিন সময় পার করেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যম।

২০ সাংবাদিক খুন                                                                                                            মহাজোট সরকারের শাসনামলে খুন হয়েছেন ২০ সাংবাদিক। ২০১৩ সালের ১৯ জানুয়ারি টাঙ্গাইল থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক মূলস্রোত পত্রিকার সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদেরই দায়ী করেছেন নিহতের পরিবারের লোকজন। এর আগে ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পত্রিকার কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হয়েছেন সাপ্তাহিক অপরাধ দমন পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক দুর্জয় চৌধুরী দীপু। ২ এপ্রিল ২০১৩ বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) ক্যামেরাম্যান শহীদুল ইসলাম রাজধানীর উত্তরায় নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে খুন হয়েছেন।  মঙ্গলবার সকালে  হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর নরসিংদীতে খুন হন দৈনিক নরসিংদীর বাণী পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার তালহাদ আহমেদ কাবিদ। ২০১২ সালের ১১ ফেব্র“য়ারি নিজ ফ্ল্যাটে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। ২০১১ সালের ১৬ জুন সারাদেশের সাংবাদিক সমাজ যখন সংবাদপত্রের কালো দিবস পালন করছিল, ঠিক ওই সময়ে সরকারি দল আশ্রিত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সংবাদ লেখায় পুলিশের সহযোগিতায় খুন করা হয় জামাল উদ্দিনকে। ২০১১ সালের ১০ জুলাই খুন হয়েছেন হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে দৈনিক বিবিয়ানার স্টাফ রিপোর্টার জুনায়েদ আহমদ জুনেদ। তাকে নৃশংসভাবে খুনের পর লাশ রেললাইনে ফেলে রাখা হয়েছিল। একই বছরের ২৮ জানুয়ারি নয়াপল্টনের বাসায় খুন হন প্রবীণ সাংবাদিক ও দৈনিক জনতার সহসম্পাদক ফরহাদ খাঁ (৬০) ও তার স্ত্রী রহিমা খাঁ (৫৫)। ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কুকরাইল এলাকায় গলা কেটে হত্যা করা হয় দৈনিক ভোরের ডাকের গোবিন্দগঞ্জ প্রতিনিধি ফরিদুল ইসলাম রঞ্জুকে। একই বছর ৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের পোর্ট কলোনি এলাকায় দৈনিক আজকের প্রত্যাশা, সাপ্তাহিক সংবাদচিত্র ও আজকের সূর্যোদয় পত্রিকার সাংবাদিক মাহবুব টুটুলকে খুন করা হয়। একই দিন অর্থাৎ ২০১০ সালের ৭ এপ্রিল ঢাকার উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের সাপ্তাহিক বজ্রকণ্ঠের সাংবাদিক আলতাফ হোসেনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে ২০১০ সালের ৯ মে গুপ্তহত্যার শিকার হন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার সিনিয়র ক্যামেরাম্যান শফিকুল ইসলাম টুটুল। যদিও পুলিশের দাবি টুটুল সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হয়েছে। ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল হামলার পর ২৮ এপ্রিল নিহত হন সাপ্তাহিক ২০০০-এর সিলেট প্রতিনিধি সাহসী সাংবাদিক ফতেহ ওসমানী। ২০০৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হন বরিশালের মুলাদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মনির হোসেন রাঢ়ী। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ঢাকায় এনটিভির ভিডিও এডিটর আতিকুল ইসলাম আতিক, একই বছর জুলাই মাসে ঢাকার সাপ্তাহিক মুক্তমনের স্টাফ রিপোর্টার নুরুল ইসলাম ওরফে রানা, আগস্ট মাসে গাজীপুরে ঢাকার সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক সময়-এর নির্বাহী সম্পাদক এমএম আহসান হাবিব বারী, ডিসেম্বরে রূপগঞ্জে দৈনিক ইনকিলাব সংবাদদাতা ও রূপগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি আবুল হাসান আসিফ খুন হন। যদিও পুলিশ দাবি করেছে আবুল হাসান আসিফ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ গত ২৫ ডিসেম্বর ভোরে রামপুরার নিজ বাসায় খুন হন দৈনিক ইত্তেফাকের একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ ফটোসাংবাদিক আফতাব আহমেদ।

আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমান প্রসঙ্গ
প্রথম দফায় গ্রেফতার : সজীব ওয়াজেদ জয় ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ইলাহীর বিদেশী কোম্পানির কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের খবর আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর থেকে সারা দেশে হামলা চলতে থাকে আমার দেশ-এর ওপর, হতে থাকে সিরিজ মামলা। ওই রিপোর্টের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে আমার দেশের বিরুদ্ধে মোট ২৫টি মামলা দেয় সরকারি দল। এর জের ধরে ২০১০ সালের ১ জুন আমার দেশ পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল ও ছাপাখানা সিলগালা করায় পত্রিকাটির প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। এতে সেখানকার সাংবাদিকসহ সাতশত কর্মকর্তা-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়ে।
২ জুন মাহমুদুর রহমানকে আদালতে হাজির করা হয় এবং কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করে সরকারের আজ্ঞাবহ পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। ওই রিমান্ডে তাকে চোখ বেঁধে বিবস্ত্র করে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়।

২০১০ সালের ১৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন নজির সৃষ্টি করে আদালত অবমাননার অভিযোগে আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেয়। এছাড়াও প্রতিবেদক অলিউল্লাহ নোমানকে এক মাসের কারাদণ্ড, দশ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৭ দিনের কারাদণ্ড এবং প্রকাশক মোঃ হাশমত আলীকে দশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়। মাহমুদুর রহমান প্রথম দফায় দীর্ঘ ২৮৮ দিন কারাভোগের পর ২০১১ সালে ১৭ মার্চ গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান। ওই সময় মামলার হাজিরার নামে তাকে নেয়া হয়েছিল দেশের বিভিন্ন কারাগারে।

দ্বিতীয় দফায় গ্রেফতার : ২০১১ সালের ১৭ মার্চ কারামুক্তির পর দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মানবাধিকারের পক্ষে এবং সরকারের গণহত্যা, গণগ্রেফতার, গণনির্যাতনের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে সাহসী সংবাদ প্রকাশ করে চলে আমার দেশ পত্রিকায়। এরই ধারাবাহিকতায় ব্রিটেনভিত্তিক পত্রিকা দি ইকোনোমিস্ট-এর বরাত দিয়ে স্কাইপি কেলেঙ্কারি কথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও প্রবাসী আহমদ জিয়া উদ্দিনের মধ্যকার সংলাপ প্রকাশ করে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা। এ কারণেই আমার দেশ পত্রিকা ও মাহমুদুর রহমান সরকারের চরম রোষানলে পড়েন। ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর কর্তৃক সিএমএম আদালতে মামলা করা হয়। মামলা দায়েরের পর থেকে টানা ১১৯ দিন নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকার পর ১১ এপ্রিল সকাল ৮ টায় সশস্ত্র ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় আমার দেশ সম্পাদকের বিরুদ্ধে তেজগাঁও, শাহবাগ ও রমনা থানায় তার বিরুদ্ধে ৮টি মামলা দেয়া হয়। এর মধ্যে তেজগাঁও থানার দুটি মামলা দেয়া হয়েছে সশরীরে উপস্থিত থেকে বাস ও ট্যাক্সিক্যাবে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে। অপর ৬টি মামলা দেয়া হয়েছে সংবাদ প্রকাশ করে শাহবাগের কথিত গণজাগরণ মঞ্চে হামলা চালানোয় উসকানি দেয়ার মিথ্যা অভিযোগে। এসব মামলাতেও মাহমুদুর রহমানকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। দীর্ঘ কারাভোগের পর ২০১৬ সালের ২৩শে নভেম্বর মাহমুদুর রহমান জামিনে মুক্তি পান।

মাহমুদুর রহমানের মা ও আবুল আসাদের বিরুদ্ধে মামলা এবং দৈনিক সংগ্রাম অফিসে বোমা হামলা
কোন কারণ ছাড়াই প্রেস সিলগালা করার পর সরকার আমার দেশ বন্ধ করার পর বিকল্প ব্যবস্থায় মগবাজারে দৈনিক সংগ্রামের আল ফালাহ প্রিন্টিং প্রেস থেকে আমার দেশ পত্রিকা ছাপানোর কারণে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মা মাহমুদা বেগম ও দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়াও ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বিনা কারণে দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক ও প্রবীণ সাংবাদিক আবুল আসাদকে আরেক দফায় গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব। গ্রেফতারের পর তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়। পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি। গত ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সন্ত্রাসী মোটর সাইকেলে করে গিয়ে দৈনিক সংগ্রাম অফিসে কয়েকটি বোমা নিক্ষেপ করে। এতে অফিসের একটি কক্ষে আগুন লেগে যায়। পরবর্তীতে অফিসের কর্মচারী ও স্থানীয় লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টেলিভিশন বন্ধ
ফেসবুক ও ব্লগে নাস্তিক ধর্মদ্রোহী ব্লগার কর্তৃক ইসলাম ও রাসূল (সা) সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করার প্রতিবাদে এবং তাদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি ও পরে ঢাকার শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করলে তাতে সরকারের নির্দেশে যৌথবাহিনীর হামলার দৃশ্য দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করতে থাকে। রাত আড়াইটায় বৈদ্যুতিক লাইন বন্ধ করে চারদিকে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ যৌথবাহিনী ‘অপারেশন ফ্ল্যাশ আউট’ নামে অভিযান শুরু করে। গণহত্যা ও লাশ গুমের সরাসরি চিত্র বা কোনো ধরনের ভিডিও যাতে প্রচার করা সম্ভব না হয় সেজন্য অভিযানের সময় একই সাথে দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টেলিভিশন বন্ধ করে দেয় সরকার। এছাড়াও বেসরকারি টেলিভিশন- চ্যানেল ওয়ানের মালিক প্রফেসর মাজেদুল ইসলাম জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী হওয়ায় তার চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হয় ২০১০ সালের ১৭ এপ্রিল। এখন পর্যন্ত খুলে দেয়া হয়নি এসব চ্যানেলকে।

একুশে টেলিভিশনকে হয়রানি
কিছুটা নিরপেক্ষ সংবাদ প্রচার করায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ বিটিআরসি ও এনবিআরের মাধ্যমে একুশে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে দফায় দফায় হয়রানি করে। তাদের তরঙ্গ স্থগিত রাখা, স্যাটেলাইট ভাড়া দেয়ার সুযোগ না দেয়াসহ নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়।

যমুনা টেলিভিশনকে সম্প্রচারে আসতে বাধা
২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর যমুনা টেলিভিশন পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শুরু করে। কর্তৃপক্ষ যখন পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচারের প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখনই ১৯ নভেম্বর অন্যায়ভাবে সরকার এর সম্প্রচার কক্ষ সিলগালা করে দেয়। এর পর থেকে যমুনার সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি সুপ্রিমকোর্ট থেকে সম্প্রচারের অনুমতি পেয়েছে চ্যানেলটি।

শীর্ষ নিউজ বন্ধ ও সম্পাদককে গ্রেফতার
শীর্ষ নিউজ ডটকম নামে একটি অনলাইন পত্রিকা ২০০৯ সালের ১৭ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করায় অল্প দিনেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ২০১১ সালের ৩১ আগস্ট শীর্ষ কাগজ ও শীর্ষ নিউজ সম্পাদক ইকরামুল হককে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সাজানো মামলা দিয়ে চার দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় এবং রিমান্ড শেষে জেলহাজতে পাঠানো হয়। দীর্ঘ কারাভোগ শেষে এ সম্পাদক ওই বছর ২৫ নভেম্বর মুক্তি পান। ২০১৩ সালে সীমিত পরিসরে শীর্ষ নিউজ ডটকম পুনরায় যাত্রা শুরু করে।

ফেসবুক ও বাঁশেরকেল্লাসহ জনপ্রিয় কিছু পেইজ বারবার বন্ধ
সরকার যখন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে বেপরোয়াভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে তখন সরকারের অপশাসনকে তুলে ধরতে দেশের সাধারণ মানুষ বেছে নেয় ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকেই। এখানেও সরকার ঘৃণ্য হস্তক্ষেপ করে। কোনরূপ পূর্ব নোটিশ ছাড়াই ২৯ মে ২০১০ সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুক বন্ধ করে দেয় সরকার। পরবর্তীতে নানামুখী চাপের ফলে তারা একে আবার খুলে দিতে বাধ্য হয়।

‘লক্ষ্য একটাই সত্য উন্মোচন’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে ২০১২ সালের ১০ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে অতি অল্প সময়ে জনতার ভালোবাসা আর সমর্থন লাভ করে বাঁশেরকেল্লা নামক ফেসবুক পেইজ। বাঁশেরকেল্লার এই জনপ্রিয়তা এবং সত্য প্রকাশের দুঃসাহসে ঈর্ষান্বিত হয়ে পেইজটিকে দুই দুইবার বন্ধ করে সরকার। যখন গতানুগতিক ধারার মিডিয়াগুলির বড় একটি অংশ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের পরিবর্তে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিরোধী দলের উপর সরকারের অগণতান্ত্রিক অন্যায় জুলুম নিপীড়নকে প্রশ্রয় দিয়ে সংবাদ প্রচার করতে থাকে ঠিক সেই মুহূর্তে এ পেইজটি মজলুমের কণ্ঠস্বর হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। যার কারণে এটি সরকারের চক্ষুশূলে পরিণত হয়। সে অপরাধে (!) সরকার ২০১৩ সালের ১১ ফেব্র“য়ারি প্রথমবারের মত ৪৪ হাজার লাইক প্রাপ্ত এ পেজটিকে বাংলাদেশ থেকে বন্ধ করে দেয়। এরপর দ্বিতীয়বার চালু করার ২৫ দিনের মাথায় ৭ মার্চ ২০১৩ তে সরকার আবারও ১ লক্ষ ২৪ হাজারফ্যান ওয়ালা এই পেইজটি বন্ধ করে দেয়। পুনরায় খোলা পেইজটি বাধার পাহাড় পেরিয়ে সত্যনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে চলছে। বারবার বন্ধ হওয়ার পরে সর্বশেষ ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ পেইজটির ফ্যান বেড়ে ৩২(বত্রিশ) লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। এখন শুধু ফেসবুক নয় বরং টুইটার ইউটিউব ও ফ্লিমারসহ অনলাইনে ব্যাপক ভিত্তিতে কাজ করে চলছে বাঁশেরকেল্লা। এ ছাড়াও বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশের অপরাধে ভিশন ২০২১, মিডিয়া ওয়াচসহ জনপ্রিয় আরো কয়েকটি পেইজ বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার।

অন্যান্য
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সরাসরি হুমকির শিকার হয়েছেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, নিউ এইজ সম্পাদক নুরুল কবীর ও আমাদের সময় সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানসহ আরও বেশ কয়েকজন সম্পাদক। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সিরিজ মামলা করা হয়েছে। আওয়ামী এমপি রনির সরাসরি হামলার শিকার হয়েছেন ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের দুই সাংবাদিক। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সরকারবিরোধী ব্যক্তিদের পরিচালিত কমপক্ষে এক ডজনের বেশি অনলাইন মিডিয়া। এছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের শত শত সাংবাদিক হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন। বিভিন্ন জায়াগায় নয়া দিগন্ত পত্রিকার অফিসে আগুন দিয়েছে আওয়ামী কর্মীরা। পাবনা প্রেস ক্লাব, ঢাকার ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনও বাদ যায়নি আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তায়নের হাত থেকে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.